আমির হোসাইন
শাল্লা উপজেলা (সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের নিরঞ্জন চন্দ্র সরকারের ছেলে নিলয় সরকারের চাচা মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকারকে পিতা ও চাচী নিয়তি রাণী সরকারকে মাতা বানিয়ে কোটা সুবিধা নিয়ে চাকরী পেয়েছে বাংলাদেশ পুলিশে।এলাকার সর্বত্রে চলেছে এই তেলেসমাতি কারবারের আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।বর্তমানে তিনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ(এসএমপি)তে কর্মরত আছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়,বীর মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার ও নিয়তি রাণী সরকার দম্পতি মুলত নিঃসন্তান।পতিত সরকারের আমলে আ.লীগ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রভাব কাটিয়ে করে বসেন তুঘলকিকান্ড।মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার চতুর মানুষ। তার আপন ভাই নিরঞ্জন সরকারের ছেলে নিলয় সরকারকে নিজের সন্তান বানিয়ে পুলিশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরী পেতে সহায়তা করেন।২০২৩ সালের ১ম ব্যাচে কনস্টেবল পদে নিয়োগ হয় নিলয়ের। বর্তমানে তিনি এসএমপি(পিওএম)আলমপুরে কর্মরত রয়েছেন যার বিপি নম্বর 0223243204 ।এদিকে নিখিল সরকারের আরেক সহোদর নিবির সরকারের মেয়ে কাকলী রাণী সরকারকেও মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা দিতে পিতার নাম নিখিল সরকার দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়েছে।কোটা সুবিধার জন্য তার ভাইদের একাধিক সন্তানদের ডকুমেন্টারি পিতা হিসেবে নিখিল বাবুর নাম রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,নিলয় সরকার মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন তার মামার বাড়ি(নিরঞ্জন সরকারের শশুর বাড়ি)হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর বসন্ত কুমার পাবলিক বিদ্যালয়ে।উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন শাল্লা সরকারি ডিগ্রি কলেজে।মামার বাড়ি থেকে পড়াশোনা করার কারণে মানুষ নিলয়কে এলাকায় কম দেখলে তারা জানেন সে নিরঞ্জন বাবুর ছেলে।চতুর নিখিল সরকার লোক জানাজানি হতে পারে এমন ভয়ে নিলয়ের মামার বাড়িতে পড়াশোনা করিয়েছেন যেন তার কাগজে পত্রে পিতা কে সেটা কেউ জানতে না পারে।২০২৩ সালে পুলিশে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের পর মানুষ কিছুটা জানতে পারে চাচকে পিতা বানিয়ে চাকরি নেয়া হয়েছে।তবুও তার প্রভাবে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি।
এবিষয়ে এলাকার একাধিক সচেতন নাগরিক জানান,নিখিল বাবুর কোন সন্তান নেই।তিনি কিভাবে নিলয়কে ছেলে বানালেন আমরা জানিনা।এতোদিন তার ভয়ে মুখ বন্ধ ছিলো সবার।
স্থানীয় পঞ্চায়েত ব্যক্তি হরিভক্ত দাস বলেন,নিখিল বাবু আমার আত্মীয়।তিনি নিলয়কে কিভাবে কি করছেন আমরা জানিনা।সে নিখল বাবুর ছেলে নয় নিরঞ্জন বাবুর ছেলে।এটা এলাকার সবাই জানে। তবে আমাদের ধর্মমতে ব্রাহ্মণ দিয়ে বর্ত করে দত্তক নিতে পারে।কিন্তু এরকম কিছুও তিনি করেননি ।এখন শুনতেছি তার আরো ভাইদের ছেলে মেয়ে নাকি মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা পেতে লেখা পড়ায় পিতার নাম হিসেবে নিখিল বাবুর নাম লিখছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নিলয় সরকার মুঠোফোনে জানান,আমাকে ছোট বেলায় আমার বাবা(নিখিল সরকার) জন্মদাতা পিতা নিরঞ্জন বাবুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছে।তবে তার আপন মামার বাড়িতে(নিরঞ্জন সরকারের শশুর বাড়ি) থেকে কেন পড়াশোনা করেছে জানতে চাইলে বলেন,আমার সুবিধার জন্য ওখানে ছিলাম।তাকে দত্তক আনার জন্য হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী বর্ত বা সরকারি কোন ডকুমেন্ট আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন,এ বিষয়ে বাবা(নিখিল সরকার)ভালো বলতে পারবেন আমি জানিনা।
মুক্তিযোদ্ধা নিখিল চন্দ্র সরকার বলেন,মুসলিম ও হিন্দু ধর্মে বিধান আছে দত্তক নেয়ার। নিলয়কে আমি দত্তক এনেছি।তবে সরকারী কোন বৈধতা নেই বলেও জানান তিনি।তার একাধিক ভাইয়ের সন্তান নিজের সন্তান বানিয়ে এনআইডি কার্ড করার বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি নন।
এবিষয়ে আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন নোমান জানান,আমি এলাকায় খোঁজ নিয়েছি,তিনি নিঃসন্তান।চাকরির বিষয়টা আমি অবগত নই।
মুঠোফোনে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম,অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সিটিএসবি ও মিডিয়া উইং, সিলেট জানান, এরকম সমস্যা নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে ইতোমধ্যে। এরপরও আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
Leave a Reply