বিশেষ প্রতিনিধি :
তারেক জিয়ার সাথে জেনারেল ইব্রাহীমের একটা ফোনালাপ ফাঁস হয়। তারেক জিয়া ইব্রাহীমকে বলেছিলেন যে একাত্তরে এক থেকে দেড় লাখ লোক নেমেছিল। সংখ্যাটা আরও কম হওয়া স্বাভাবিক।
চব্বিশের ৫ই আগস্ট সকালবেলা শুধু ঢাকা শহরেই আপনারা কোটির কাছাকাছি মানুষ নেমেছিলেন। ওটা কিন্তু আন্দোলনে নামা না। সাক্ষাত মৃত্যু প্রস্তুতি নিয়ে নামা। আমরা কেউ জানতাম না যে সেদিন হাসিনাকে উতখাত করা হবে।
আমার স্কুল-ভার্সিটির বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়ররা আমাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল। একজন চিঠি লিখে ছবি তুলে দিয়েছিল যে ও শহীদ হলে যেন সেটা প্রকাশ করি। একজনের গার্লফ্রেন্ডের সাথে ওর যোগাযোগ নাই মাস দুয়েক। ও বলেছে শহীদ হলে গার্লফ্রেন্ডকে যেন বলি ও স্যরি। মোবাইলের ওয়ালপেপারে নাম, পিতার নাম, ব্লাডগ্রুপ, এমার্জেন্সি কন্টাক্ট নাম্বার সেট করছিল সবাই। সবার টাইমলাইনে দোয়া-দরুদ ছিল।
৩৬শে জুলাই আমার ফ্রেন্ডলিস্টের আশি শতাংশের বেশি মানুষ রাস্তায় নেমেছিল শহীদ হতে হবে এটা ধরে নিয়ে। খালি হাতে। কোন বিদেশী শক্তির সমর্থন ছাড়াই। কোন অস্ত্র ছাড়াই।
ঘটনাচক্রে সেদিন খুব বেশি প্রাণহানি হয় নাই- মাত্র দুইশোর মত। যাত্রাবাড়িতে ৫০ এর কাছাকাছি। কিন্তু সেদিন যদি হাসিনা না পালাতো, তাহলে ৩৬ডে জুলাইতেই একাত্তরের ত্রিশ লাখের মিথ ক্রস করে যেত।
আচ্ছা, কি এমন হল যে একাত্তরে বিদেশী পরাশক্তির সমর্থন, সরাসরি সশস্ত্র ব্যাকাপ সত্ত্বেও মাত্র এক-দেড় লাখ লোক রাস্তাায় নামলো না?
অথচ চব্বিশে কোন ঢাল-তলোয়ার ছাড়াই শহীদ হওয়ার জন্য আপনারা কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে গেলেন?
অনেকে অনেক কথা বলবে। তারা আপনাদের ভয় পায়। আমাদের ভয় পায়। তাই আমাদের খাটো করতে চায়, দমন করতে চায়। কিন্তু নিজেকে ৩৫শে জুলাই বা ৩৬শে জুলাইয়ে ফেরত নিয়ে যান- আপনি বুঝতে পারবেন যে চব্বিশই পেরেছিল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। এভাবে আর কিছুই পারে নাই।
এবং পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের শোষণ-বঞ্ছনার গল্পের সবটুকু যদি সত্য ধরেও নিই, তারপরও সেটা ফ্যাসিবাদী দু:শাসনের এক মাসের ভয়াবহতার কাছেও নস্যি। এটা আপনি ৩৫শে জুলাইয়ে জানতেন। আজকে হয়ত ওরা ভুলিয়ে দিতে চাইছে।
নতুন বন্দোবস্তকে যারা ভয় পায়, তরুনদের যারা ভয় পায়, চাঁদাবাজি-দুর্নীতির দ্বিদলীয় চক্রকে যারা ভয় পায়, তারা চব্বিশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। যেকোনভাবে চব্বিশকে আন্ডারমাইন না করলে তাদের রাজনীতি টিকে থাকবে না। হয়ত তারা চব্বিশকে হারিয়েও দিবে।
এদের প্রোপাগান্ডার মুখে যখন নিজেকে বিভ্রান্ত মনে হবে, তখন ৩৬শে জুলাইয়ের ফজরে ফিরে যাবেন। একদম নিরস্ত্র অবস্থায় আপনি-আমি মিলে একটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার বৈশ্বিক পরাশক্তি ও আমাদের কলোনিয়াল মাস্টার ইন্ডিয়াকে আমরা পরাজিত করেছি। কারও সহায়তা ছাড়া। কোন আশ্বাস ছাড়া।
চব্বিশের স্বাধীনতা শুধুই আমার, আপনার – বাংলাদেশের। আর কোন দিন-তারিখ-সনের ব্যাপারে এই কথাটা আমরা বলতে পারি না।
আজকে অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু ছত্রিশে জুলাইয়ের ভোরবেলায় কিন্তু ফাহাম আব্দুস সালাম ঐ যে একাত্তরকে স্ক্যাম বলেছিল সেটাকেই আপনার ধ্রুবসত্য বলে মনে হয়েছিল। আজকে ফাহাম নিজেও হয়ত আর তার ঐ অবস্থানে নাই, কিন্তু ছত্রিশে জুলাইয়ের ফজরের ওয়াক্তের মত পবিত্র ওয়াক্ত আর কিছু আছে কিনা খোদা জানেন। ঐদিন কিন্তু আমাদের মনে সত্য-মিথ্যা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। স্বাধীনতার মানে নিয়েও কোন সন্দেহ ছিল না।
আমরা ছত্রিশে জুলাইয়ে ভাইয়ের শাসন থেকে নাজাত পেয়ে প্রতিবেশী পার্ভার্ট চাচার পারভারশনের শিকার হই নাই। প্রাচীনপন্থী, প্রতিক্রিয়াশীলরা যেটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেটার সম্পর্কে কিন্তু এই গর্বটা করার উপায় নাই।
১৯৭০ সালে আমাদের পূর্বসূরিরা যখন রাস্তায় নামতেন, আন্দোলন করতেন, তখন তাদের মাথায় থাকত দেশের সরকারের প্রতিক্রিয়া কি হবে।
আর ২০২৪ সালে এসে আমাদের ভাবতে হয়েছে – এখনও ভাবতে হয়- প্রতিবেশী প্রভু দেশের সরকারের ভূমিকা কি হবে, আমেরিকার ভূমিকা কি হবে। কারণ ১৯৭০ আর ২০২৪ এর মধ্যে একটা ১৯৭১ আছে।
একাত্তরের কারণে আমরা ভোটের অধিকার হারিয়ে বাকশালের খপ্পরে পড়েছিলাম। চব্বিশে ইনশাল্লাহ আমরা সেই ভোটের অধিকার ফিরে পাব- যদি না একাত্তরীরা ষড়যন্ত্র করে আমাদের হারিয়ে না দেয়।
একাত্তর না হলে চব্বিশ হত না। গোলামি ছাড়া আজাদী আসে না।
সোর্স: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন টেলিগ্রাম গ্রুপ
Leave a Reply